নতুনরা ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবেন? ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্নাঙ্গ গাইডলাইন

ফ্রীলান্সিং একটি পরিচিত শব্দ সকলের কাছে। এমন মানুষ খুব কমই আছেন যারা ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি শুনেননি। ফ্রীলান্সিং এমন একটি কাজের ক্ষেত্র যা মানুষকে নয়টা-পাঁচটা অফিস থেকে মুক্তি দিয়েছে। স্বাধীনভাবে কাজ করার অপার এক মাধ্যম হলো ফ্রিল্যান্সিং।

আপনার আশেপাশের বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী বা অনেকের কাছেই আপনিই ফ্রিল্যান্সিং এর ব্যাপারে শুনেছেন। অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করছেন এবং খুব ভাল অঙ্কের টাকা আয় করছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে নিজের মতো করে।

আপনার কাছে যদি একটি কম্পিউটার ও একটি সুনির্দিষ্ট দক্ষতা থাকে তাহলে আপনিও নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং কি, কেন ফ্রিল্যান্সিং, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে করা যায় ফ্রীলান্সিং কত প্রকার ইত্যাদি অনেক প্রশ্নই হয়তো আপনার মাথায় আসছে, যা জানা আপনার জন্য জরুরি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে।

আপনি যদি একজন বিগিনার হয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই। এই পোস্টে ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে করা যায় আরও বিস্তারিত কিছু বিষয়ের বিশদ আলোচনা নিয়েই আজকের আয়োজন।

নতুনরা কিভাবে ফ্রীল্যান্সিং শুরু করবেন।
নতুনরা কিভাবে ফ্রীল্যান্সিং শুরু করবেন।

ফ্রিল্যান্সিং কি?

আমরা যেই কাজই করি না কেন সেখানে আমাদের অফিসে বা কাজে যাওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট সময় থাকে, সেখান থেকে ফেরত আসার নির্দিষ্ট সময় থাকে। আপনার কাজ শেষ হয়ে গেলেও সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি অফিস থেকে আসতে পারবেন না।

এরকম কিছু ধরাবাঁধা নিয়মের ভেতর দিয়েই আমাদেরকে যেতে হয় কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু ফ্রীলান্সিং বিষয়টি সম্পূর্ণ তার বিপরীত।  গৎবাঁধা নিয়মের বাইরে এক অপার কাজের ক্ষেত্র হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং।

ফ্রীলান্সিং হচ্ছে এমন একটি কাজের ক্ষেত্র যেখানে আপনি আপনার সুবিধামতো সময়ে কাজ করতে পারবেন। আপনি কাজটি সকালে করছেন না বিকালে করছেন না না সন্ধ্যায় কোনো বিষয় নয়।

Read More:নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং- মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার টিপস

আপনি কাজটি যে ডেডলাইনের ভিতর জমা দিচ্ছেন কিনা সেটিই হচ্ছে বিষয়ে। একটি কোম্পানি বা একজন ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আপনাকে হায়ার করবে এবং সেই কাজটি আপনাকে সুনির্দিষ্ট সময়ের ভিতর দিতে হবে।

কিন্তু কাজ কখন শুরু করবেন এবং কিভাবে করবেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয় আপনাকে কোন নির্দিষ্ট নিয়মের ভেতর দিয়ে জন্য যেতে হবে না।

আপনি আপনার সুবিধামতো কাজটি জমা দিবেন ডেডলাইনের ভিতর। এটিই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আর যিনি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাকে ফ্রিল্যান্সার বলে।

Read More:

ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা সমূহ

ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেক সুবিধা রয়েছে। তার ভিতরে কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো।

স্বাধীনভাবে কাজ করার সুবিধা 

স্বাধীনভাবে কে না চায় কাজ করতে? কিন্তু এই স্বাধীনতা কিন্তু আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে পাবেন না। আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর সকলকে কাজ করতে হবে এবং একটি শৃংখলার ভিতর দিয়ে যেতে হবে।

কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে সেই গৎবাঁধা নিয়ম এর ভিতর দিয়ে যেতে হবে না। আপনি স্বাধীনভাবে আপনার কাজ করতে পারবেন।

নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করা যায়

পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষই আছেন বলতে গেলে বেশিরভাগ মানুষই নিজের অপছন্দনীয় কাজটি করে থাকেন শুধু টাকা ইনকামের জন্য। কারণ তাদেরকে কোন একটি কাজ করে নিজেদেরকে চালাতে হবে।

হয়তো সে কাজটি তার একদমই পছন্দ না তারপরও তিনি সেই কাজটা দিনের পর দিন করে যাচ্ছেন কারণ তার প্রয়োজন।

কিন্তু ফ্রীলান্সিং এমন একটি ক্ষেত্র এখানে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী স্কিল অর্জন করে নিজের প্রোফাইল তৈরি করে তারপর আপনি সে কাজটি করতে পারবেন যা টাকার সাথে সাথে আপনার আনন্দকেও বজায় রাখে।

কারণ কোন কাজকে যখন আপনি ভালোবেসে করবেন তখন সে কাজের গতি ও মান কিন্তু অটোমেটিক্যালি বৃদ্ধি পায়।

আন্তর্জাতিক মার্কেটে কাজ করা যায়

আপনার দেশে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান  থাকলে আপনাকে কিন্তু সেটা দেশের ভিতরেই করতে হবে এবং সেখানে যদি আপনি ক্রেতা না পান তাহলে কিন্তু আপনার ব্যবসা হয়তো অতটা ভালো চলবে না।

কিন্তু আপনি যখন একজন ফ্রিল্যান্সার, তখন কিন্তু আপনি আন্তর্জাতিক মার্কেটে আপনার দক্ষতাকে উপস্থাপন করতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন এবং আন্তর্জাতিক মার্কেটে  সাধারণত টাকার মান বেশি হয় যার ফলে দেশে যে পরিমাণ টাকা আয় করতেন তারচেয়ে কয়েকগুন বেশি আপনি ইনকাম করতে পারবেন।

আন্তর্জাতিক মার্কেটে সবসময়ই কাজ থাকে যার ফলে আপনি কাজের স্বল্পতায় কখনোই ভুগবেন না।

নিজের মতো করে ছুটি নিতে পারবেন 

গৎবাঁধা নিয়মের চাকরিতে আপনি যেকোন সময় ছুটি নিতে পারবেন না। যদিও সেটা খুব প্রয়োজন হোক না কেন। আপনাকে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের একটি নিয়মের ভেতর দিয়ে যেতে হবে।

তারা যখন আপনাকে ছুটি দিতে চাইবেন তখনই আপনি ছুটি নিতে পারবেন। সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া আপনি সাধারণত কোনো ছুটি নিতে পারবেন না, হয়তো সাপ্তাহিক ছুটির ঐ দিন আপনার ছুটির প্রয়োজন নেই। কিন্তু যেদিন আপনার ছুটির প্রয়োজন সেদিন কিন্তু আপনি ছুটি পাবেন না।

একজন ফ্রিল্যান্সার কিন্তু এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন না। তিনি চাইলে যেকোন সময় নিজের কাজ থেকে বিরতি নিতে পারেন এবং নিজের ছুটি উপভোগ করতে পারেন নিজের মত করে।

ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার?

ফ্রিল্যান্সিং একটি ব্যাপক ক্ষেত্র কাজের। এখানে প্রচুর পরিমাণে কাজ রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। কিন্তু আপনি আসলেন আর ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলেন ব্যাপারটা কিন্তু এরকম নয়।

আপনাকে যে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে দক্ষ হতে হবে তারপরে আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন, তার আগে কিন্তু নয়। সেটা হতে পারে ব্লগিং, সেটা হতে পারে গ্রাফিক ডিজাইনিং, সেটা হতে পারে ওয়েব ডেভলপার আরো অনেক কিছু।

Read More:ফ্রিল্যান্সিং কি ? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ( ফ্রিল্যান্সিং প্রশ্নের উত্তর )

নিচে আমরা কিছু ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়ে কথা বলব যা পড়লে আপনি মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে যাবেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগত সম্পর্কে।

কনটেন্ট রাইটিং

বর্তমানে জনপ্রিয় একটি কাজের মাধ্যম কনটেন্ট রাইটিং। যে কোন কাজে অভিজ্ঞতা লাগে। কনটেন্ট রাইটিং, এখানে কোন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়না কাজ শুরু করার আগে।

আপনার ভিতরে যদি লেখালেখির অভ্যাস থাকে, কোন কিছুর বিষয়ে গবেষণা, রিচার্জ করায় আপনি অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি এই জগতে প্রবেশ করতে পারেন একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে।

প্রতিদিন আমরা যত ওয়েবসাইট দেখি, এইযে আমরা অনলাইনে কোন কিছু সার্চ দিলে বিভিন্ন তথ্য আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয় এই তথ্যগুলো পিছনে আসলে কারা কাজ করে? এই তথ্যগুলো জাদুর মত করে আমাদের সামনে চলে আসে না নিশ্চয়ই? অবশ্যই এর পিছনে কেউ না কেউ কাজ করেন।

Read More:ডিজিটাল মার্কেটিং ও তার শাখা-প্রশাখা

আর তারাই হচ্ছেন সেই কনটেন্ট রাইটার বা শব্দের জাদুকর। তারা কোন বিষয়কে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে ও তথ্যবহুলভাবে আপনার সামনে তুলে ধরেন আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়টিকে।

ধরুন আপনি অনলাইনে সার্চ দিলেন কনটেন্ট রাইটিং কি, এইটা কিভাবে শুরু করা যায়, এটার ভবিষ্যৎ কি, তাহলে আপনি এমন অনেকগুলো লেখা পাবেন যা আপনাকে কনটেন্ট রাইটিং জগতে প্রবেশ করতে ও একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং

আপনি কোন জিনিস যখন মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন সেটা যদি কোন সুন্দর ছবি, লোগোর মাধ্যমে আপনি উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে আপনার ঐ কাজের প্রেজেন্টেশনটা আরও বেশি সুন্দর হয়ে উঠে। মানুষ এই বিষয়টার উপর আরো বেশি আকর্ষিত হয়।

কিন্তু এই কাজগুলো কিভাবে করা যায়? গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর মাধ্যমে আপনি টি-শার্ট ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং আরো অনেক কাজ করতে পারবেন।

ওয়েব ও এপ ডেভলপিং

ওয়েবসাইট ও অ্যাপ তৈরি করেও আপনি ইনকাম করতে পারেন। যেই সাইটগুলোতে আমরা কোন কিছু পড়ি বা এপগুলোর মাধ্যমে আমরা সচরাচর আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে পারি যে সকল অ্যাপ ও সাইট কিন্তু ওয়েব ডেভলপাররাই তৈরি করে থাকেন।

আপনি ওয়েব ডেভলপমেন্ট এর উপরে দক্ষ হয়ে আপনি তৈরি করে এই বিষয়ে একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠতে পারেন।

Read More:সেরা 10 টি অনলাইনে ইনকাম করার উপায়

ডিজিটাল মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং করেও আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠতে পারেন। এটি একটি জনপ্রিয় মাধ্যম বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার।

ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক ধরনের হতে পারে আপনি কারোও ওয়েবসাইট গুগলে টপে  এনে দিলেন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করলেন কোন বিষয়ে প্রমোশন করা ইত্যাদি বিষয়গুলো হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারি?

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য আপনার প্রথমে সুনির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপরে দক্ষ হতে হবে। প্রথমে নির্বাচন করুন, আপনি কোন বিষয়টি পছন্দ করেন করতে, কনটেন্ট রাইটিং নাকি ডিজিটাল মার্কেটিং নাকি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বা অন্যকিছু।

যে বিষয়টিই হোক না কেন সেই বিষয়টির উপরে আগে দক্ষ হন আর দক্ষতা অর্জনের জন্য আপনি বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেন এবং দুই তিন মাস একটি বিষয়ের উপরে যদি আপনি সঠিকভাবে সময় দেন তাহলে ঐ বিষয়ের উপরে আপনি দ্রুতই দক্ষ হয়ে উঠবেন এবং নিজের একটি প্রোফাইল তৈরি করে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারবেন।

কাজ কোথায় পাব?

কোন কাজে দক্ষ হওয়ার পর আপনাকে একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। আপনার প্রোফাইলে আপনার কাজের দক্ষতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। অনেকগুলো সাইট রয়েছে অনলাইনে যার মাধ্যমে আপনি কাজ করতে পারবেন সেখান থেকে কাজ খুঁজে পাবেন। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফাইবার, আপওয়ার্ক।

পরিশেষে

উপরে আমি একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়ার সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আপনার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।  আপনি একজন বিগিনার থেকে কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠতে পারেন এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।

বর্তমানে স্বাধীনভাবে কাজ করার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফ্রীলান্সিং যা শুধু দেশীয় কাজকে সহজ করে দেয়নি আন্তর্জাতিক বাজারেও কম মূল্যে বেশি লাভবান হওয়ার একটি রাস্তা খুলে দিয়েছে।

যে কেউ যেকোনো বয়সে নিজেকে একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ করে ফ্রীল্যান্সিং শুরু করতে পারে। আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ হয়ে কাজ করতে চান তা নির্বাচন করে কাজ শুরু করে দিন। হয়তো আপনি খুব শীঘ্রই একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top