ট্রেডমার্ক কি ? ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম

ট্রেডমার্ক কি : বর্তমান সময়ের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে বাজার থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত পণ্য কিনে থাকি।

ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন। প্যাকেটের গায়ে কোন একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের লোগো বা চিহ্ন দেওয়া রয়েছে। এ চিহ্নটি মূলত ট্রেডমার্ক।

তো আপনি যদি কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আপনার ব্যবসায়ী প্রোডাক্ট থেকে থাকে। তবে অবশ্যই আপনার একটি ট্রেডমার্ক করা প্রয়োজন পড়বে।

ট্রেডমার্ক কি ? ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম
ট্রেডমার্ক কি ? ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম

কারণ বাজারে অন্যান্য প্রোডাক্ট এর থেকে আপনার ব্যবসা বা প্রোডাক্ট আলাদা করার জন্য ট্রেডমার্ক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

আপনার পণ্য বা প্রোডাক্ট ব্যবসার নাম দিয়ে। কোন কিছু নকল করে, অন্য কেউ যাতে বাজারজাত করলে, ব্যবসা বা ব্যবসার মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

তাই আপনি যদি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাজারে বহু পরিচিত করতে চান? তাহলে আপনাকে অবশ্যই ট্রেডমার্ক তৈরি করতে হবে।

আর ট্রেডমার্ক গুলো আপনার প্রতিটি প্রোডাক্ট এর গায়ে সংযুক্ত করতে হবে।

তাহলে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট গুলো ব্র্যান্ড আকারে মানুষের কাছে পরিচয় পেয়ে যাবে।

তাই আমাদের আজকের এই আলোচনাতে, ট্রেডমার্ক কি এবং ট্রেডমার্ক করার নিয়ম সম্পর্কে। বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

তাই আমাদের লেখা আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত।

ট্রেডমার্ক কি ?

আপনার যদি নিজের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে, বা ব্যবসার শুরু করতে যাচ্ছেন। তাহলে আপনি চাইলে আপনার ব্যবসার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গুলোর থেকে যাতে কিছুটা অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্মিলিত হয়।

এজন্য আপনি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য একেবারে স্বতন্ত্র একটি নাম পছন্দ করেছেন। ব্যবসায়িক নীতিমালা পরিবর্তনের পাশাপাশি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য প্রয়োজন হবে। একটি লোগো বা চিহ্ন। যার মাধ্যমে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলবে।

উক্ত লোগো বা চিহ্ন ব্যবসায়িক পরিচিতি বাড়িয়ে চলতে অনেক বেশি সহায়তা করে।

তো বলা যায়- ট্রেডমার্ক বা ব্যবসা স্বত্ত্ব হচ্ছে- এমন একটি চিহ্ন যার মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে। আগত সার্ভিস বা প্রোডাক্ট এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হতে, আগত সার্ভিস বা অন্যকে আলাদা করা যায়।

তো আমাদের জানামতে সর্বপ্রথম বিশ্বে ইতালিতে ট্রেড মার্কের ব্যবহার শুরু করে।

সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র লোগো বা চিহ্ন। সেই প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র, ক্যাশ মেমো অন্যান্য সেবা ও পণ্যের মোড়কে দেখা যায়। সাধারণত কোন প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময় পর পুনরায় নবায়ন করা প্রয়োজন হয়।

তাই ট্রেডমার্ক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একমাত্র ট্রেডমার্ক ব্যবহার করতে পারে।

মনে করুন আপনি ইউনিক নামে একটি ব্যবসা শুরু করলেন এবং সেই নামে একটি ব্র্যান্ড তৈরি হল। সে সময় উক্ত নামের অন্য একজন আরেকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান চালু করে আপনার ব্র্যান্ডের বারোটা বাজিয়ে দিল বা আপনার পরিশ্রমের ফল সেই ব্যক্তি ভোগ করা শুরু করল।

এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, ট্রেডমার্ক। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যখন প্রতিটি পণ্যের গায়ে ট্রেডমার্ক  দেওয়া থাকবে তখন কপি করে অন্য কেউ কোন প্রোডাক্ট তৈরি করলে সেটি ধরা খাবে।

তখন আপনি সেই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উপর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। তাই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ট্রেডমার্ক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

তো আশা করি আপনারা বুঝতে পারলেন কেন, ট্রেডমার্ক করা হয়।

ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম

তো আপনারা উপরোক্ত আলোচনাতে জানতে পারলেন। ট্রেডমার্ক মূলত কি? তো আপনার যদি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে থাকে। তবে অবশ্যই ট্রেডমার্ক ব্যবস্থা করতে হবে।

তো ব্যবসার জন্য ট্রেডমার্ক করতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তো কিভাবে আপনার ব্যবসার জন্য ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন করবেন।

সে বিষয়ে জানতে নিজে দেওয়া পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করুন।

পদক্ষেপ-১

ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের জন্য পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক এর অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে। সে ফর্মটির সংশ্লিষ্ট দপ্তর এর মাধ্যমে বা অনলাইনের মাধ্যমে ডাউনলোড করে নিতে হবে।

নির্দিষ্ট আবেদন ফরমের মাধ্যমে মালিকানা রয়েছে। এমন যেকোনো ব্যাক্তি বা আইনজীবের সাহায্য নিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

আপনারা উল্লেখিত ফর্মটির ডাউনলোড করে যথাযথভাবে কম্পিউটারে 4 টি সেট পূরণ করে নিতে হবে।

তারপর পরনকৃত ফরমটি নির্দিষ্ট দলিল পত্রাদি সহকারে, পেটেন্টট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর এর কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।

পদক্ষেপ-২

ট্রেডমার্ক আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর। সরবরাহ সংশ্লিষ্ট তথ্য ও লোগো পূর্বের ব্যবহার করা হয়েছে কিনা? তা যাচাই করা হয়।

এক্ষেত্রে যদি কোন প্রকার ত্রুটি পাওয়া যায় তাহলে পরীক্ষক টি এম আর-12 ফর্ম এর মাধ্যমে তা আবেদনকারীকে অবহিত করতে হবে।

আবেদনকারীর জবাব যদি সুস্পষ্ট হয় এবং যথাযথ বলে প্রমাণিত হয়ে যায়। বা কোন ত্রুটি যদি পড়লে হতো না হয়। তাহলে ট্রেডমার্ক জার্নালে প্রকাশের জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়।

পদক্ষেপ-৩

জার্নালে প্রকাশের অনুমতি লাভের পরে নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা প্রদানের মাধ্যমে সেই মার্কটি জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হয়। মার্কটি বিজি প্রেস মুদ্রণ এর জন্য টিএম-9 ফরমেএ প্রেরণ করা হয়।

জার্নালে প্রকাশ হওয়ার পরে বিশ্বের যেকোন প্রান্তরে যে কেউ উক্ত মার্ক বা লোগো যদি অনুপযুক্ত বা সাংঘাতিক মনে করে, সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তির জন্য মামলা করতে পারেন।

অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া কিংবা না হওয়ার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী কার্যক্রমে এগিয়ে যায়। জার্নালে প্রকাশের জন্য এক হাজার টাকা ফি এবং সাথে 15% ভ্যাট প্রদান করতে হয়।

পদক্ষেপ-৪

জার্নালে প্রকাশের পরে যদি এই মার্কের বিপরীতে কোন অভিযোগ না থাকে। অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগ সঠিক বলে প্রমাণিত না হয়।

তাহলে আকাঙ্ক্ষিত লোগো বা মার্ক টি টিএম-11 ফরম পূরণ ও নির্ধারিত টাকা জমা করনের মাধ্যমে ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত হবে। আবেদনকারী একটি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারবেন।

ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন ফি

সাধারণত প্রোডাক্টের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এ রেজিস্ট্রেশন ফি প্রস্তুত করা হয়। তো ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন ফি গুলো হচ্ছে-

  • একটি পণ্য ১৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা।
  • দুই থেকে চারটি পণ্য ২৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা।
  • পাঁচ থেকে ততোধিক পন্য ৩৫০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা।

ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ

ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশন করার পর মেয়াদ দেওয়া হয় ০৭ (সাত) বছরের জন্য। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে নবায়ন আবেদন করলে দশ বছরের জন্য নবায়ন করা সম্ভব হয়।

শেষ কথাঃ

তো বন্ধুরা আপনারা যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন এবং প্রডাক্টগুলো দ্রুত মানুষের কাছে এবং বাজারে পরিচিত করে তুলতে চাচ্ছেন।

তবে অবশ্যই আপনাকে ট্রেডমার্ক ব্যবহার করতে হবে।

তো আমরা আপনাকে জানিয়ে দিলাম ট্রেডমার্ক করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত। তথ্য সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত থাকে।

তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক টিপস পেতে, নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top