ফেইকসবুক মার্কেটিং || ফেইসবুক পেইজ রিচ ও পেইজ থেকে সেল না হওয়ার কারন

অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বহুল পরিচিত ও ব্যবহৃত সেক্টর হচ্ছে ” ফেসবুক পেইজ “। কিন্তু পেইজ রিচ না হওয়ার কারন  ও ফেসবুকে সেল না হওয়ার কারন গুলো কি। আমরা সমস্যাগুলো বের করে তার সমসাধান কিভাবে করবো? আজ আমরা ফেসবুক বিসনেজ পেইজ রিচ হওয়া ও সেল বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করবোঃ

ফেইকসবুক মার্কেটিং || ফেইসবুক পেইজ রিচ ও পেইজ থেকে সেল না হওয়ার কারন
ফেইকসবুক মার্কেটিং || ফেইসবুক পেইজ রিচ ও পেইজ থেকে সেল না হওয়ার কারন

বর্তমান যুগ অনলাইনের। আমরা দিনের প্রায় এক চতুর্থাংশ সময় ব্যয় করি এই অনলাইনে। তারই পরিপেক্ষিপে এদেশের ই-কমার্স সাইটগুলো আরো বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠছে। কেননা মানুষ এখন অনলাইনে বিজনেস করে। তাদের ব্যয়কৃত সময়কে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের একটা পরিচিতি তৈরী করে আয় করছে অনায়াসেই।

অফলাইনে বিসনেজ এর পাশাপাশি অনলাইনেও বিসনেজ করে সফল হয়েছেন অনেকেই। আবার অনেকেই ঝরে পরে গেছেন। আজ সকলের উপযোগী ও একটি কমন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো।আশাকরি সকলেই উপকৃত হবেন।

বর্তমান উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের একটি কমন প্রশ্ন হচ্ছে তাদের পেইজে লাইক,কমেন্ট হচ্ছে না। অর্থাৎ পেইজ রিচ হচ্ছেনা। ফলে পেইজ থেকে সেল হচ্ছে না?

অনলাইন বিজনেস বা উদ্যোক্তাদের সকলেরই একটা বিজনেস পেইজ থাকে, যেটার মাধ্যমেই তারা তাদের এই অনলাইন বিক্রয় কার্যক্রম সচল রাখে।অনেকেই তাদের পেইজ থেকে হিউজ পরিমান সেল করছে, তো কেউ নিরাশ হয়ে বসে আছে।

অনলাইনে বিসনেজ পেইজ হচ্ছে আপনার অনলাইন দোকান/শপ। যেমনটা অফলাইনে হয় আরকি। তবে অনলাইনে সুবিধা হলো এখানে টাকা খরচ করে এই দোকানটিকে আকর্ষনীয় করে তুলতে হয়না।

তাই বলে কি আমরা আমাদের এই অনলাইন দোকানটিকে সাজাবো না?

হ্যা অবশ্যই সাজাবো।কেননা আমরা জাতিতে বড়ই সৌখিন।সুন্দরতা সবসময়ই আমাদের আকৃষ্ট করে।তাই আমাদের বিজনেস পেইজটি কেও আমরা সুন্দর করেই সাজিয়ে নিবো শুরুতেই।

ফেসকবুক মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি

প্রথমে দর্শনধারী, পরে গুন বিচারী

কথাটি আমরা সকলেই জানি ও মানি। আমার পেইজে কি কি পন্য আছে,সেটা কতটা কোয়ালিটি পূর্ন,সেটা কিন্তু পরে ক্রেতার নজরে আসবে।

প্রথমেই নজরে আসবে আপনার পেইজ ও তার সেটআপ গুলোই। যেমনটা আমরা অফলাইনে করে থাকি। আমরা সুন্দর ও গোছানো পরিপাটি দোকান থেকেই পন্য ক্রয় করতে যাই। কেননা যে দোকান সুন্দর রাখতে যানে,সে সুন্দর পন্য কালেকশন ও রাখবে এটাই বিশ্বাস করি আমরা।

তো কেউ যখন আমাদের পেইজ ভিজিট করতে আসবে,এসেই যদি দেখে পেইজে সঠিক তথ্যগুলোও দেওয়া নেই,পেইজে আপনার এক্টিভিটি নেই,প্রয়োজনীয় সেটআপগুলো করা নেই, পেইজ লোগো, প্রোফাইল বা কভার ফটো ঠিক নেই তাহলে পেইজের নামের সাথে বিজনেসের সামঞ্জস্যতা নেই তাহলে গ্রাহক শুরুতে আগ্রহ হারাবে।

একজন অপরিচিত লোককে নিজের কাস্টমার করতে হলে অবশ্যই আপনাকে যথেষ্ট স্মাট ও প্রফেশনাল হতে হবে। আর আপনি কতটা প্রফেশনাল সেটা গ্রাহককে বোঝানোর জন্য অবশ্যই আপনার পেইজকে প্রফেশনাল বিজনেস পেইজের মত সেটআপ করতে হবে। আর তাহলেই ক্রেতা নির্ভরশীলতা পাবে পেইজ থেকে পন্য ক্রয় করতে।

চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে একটা ফেইসবুক বিজনেস পেইজকে প্রফেশনালি সাজানো যায় যেন নতুন ক্রেতা অন্তত আপনাকে প্রতারক মনে না করেঃ

একটা ফেইসবুক বিজনেস পেইজের আউটলুককে প্রফেশনাল করার জন্য এর প্রত্যেকটা অপশন এবং ফিচারের দিকে নজর দেয়া উচিত নিচে একে একে সবগুলোই আলোচনা করা হলো

পেইজ নেম/ ব্র্যান্ড নেমঃ

আপনি যদি এখনো বিজনেস শুরু না করে থাকেন অর্থাৎ শুরু করার কথা ভাবছেন তাহলে আপনার উচিত আপনার বিজনেসের জন্য একটা প্রফেশনাল নেম সিলেক্ট করা। আর যারা ইতিমধ্যে শুরু করেছেন বা মাত্র অল্পকিছুদিন হয়েছে শুরু করেছেন তারাও একটু এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন যে আপনার নামটা আসলেই প্রফেশনাল কীনা। তো আসুন সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক একটা প্রফেশনাল নেম কীভাবে সিলেক্ট করতে পারেন সে বিষয়টা।

★ এমন নেম সিলেক্ট করুন যেটার বানান এবং উচ্চারণ সহজ।

★ ইউনিক একটি নেম সিলেক্ট করুন যেন অন্য কারো সঙ্গে মিলে না যায়।

★ এমন নেম সিলেক্ট করুন যেটার ডোমেইন এভেইলএবল রয়েছে

আসলে দিনশেষে আপনার বিজনেসের নেমটাই সবজায়গায় আপনার বিজনেসকে রিপ্রেজেন্ট করবে এবং ব্র্যান্ডিং এর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে তাই এই ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করুণ প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন।

প্রফেশনাল লোগোঃ

সম্ভাব্য ক্রেতারা যখন কোন কিছু অর্ডারের জন্য আপনার পেইজে প্রবেশ করবে তখন প্রথম দিকেই তাদের চোখে আপনার লোগো পড়বে, কারোন পেইজের প্রোফাইল ফটো এর জায়গায় বিজনেসের লোগো ব্যবহার করা উচিত।

কিন্তু অনেককেই দেখা যায় পেইজের প্রোফাইল ফটো এর জায়গায় লোগো না দিয়ে কোনো একটি ছবি দিয়ে রেখেছেন যেটা খুবই আনপ্রফেশনাল।

আবার অনেকে লোগো ইউজ করলেও দেখা যায় সেটা খুবই ঝাপসা অথবা অনলাইনের কোনো জায়গা থেকে ডাউনলোড করা এবং এই ধরণের লোগো ক্রেতাদের মনে আপনার বিজনেস সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করে দেয় ।

তাই অন্তত ক্রেতা হারাতে না চাইলে নিজের বিজনেসের জন্য একটি প্রফেশনাল লোগো ডিজাইন করে নিন, প্রয়োজনে এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিন

Read More: ফ্রিল্যান্সিং কি ? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ( ফ্রিল্যান্সিং প্রশ্নের উত্তর )

প্রফেশনাল কভার ফটোঃ

আপনার ফেইসবুক পেইজে যদি কেউ প্রবেশ করে তাহলে প্রথমেই যেটা দেখতে পাবে সেটা হলো পেইজের কভার ফটো। এই কভার ফটোই ক্রেতাদের একটা সূক্ষ মেসেজ দেয় সেটা হলো এই বিজনেস পেইজটা কতটা প্রফেশনাল। বলতে গেলে এই কভার ফটোই নতুন ক্রেতার মনে আপনার বিজনেস সম্পর্কে ফার্স্ট ইম্প্রেশন তৈরি করে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের বেশিরভাগ উদ্যোক্তার পেইজেই দেখা যায়, হয় কোন জায়গা থেকে একটা ছবি ডাউনলোড করে এনে দিয়ে দিয়েছে অথবা নিজেরই কোনো একটা প্রোডাক্টের ছবি কভার ফটোতে দিয়ে রেখেছে। যেটা সাইজ অপ্টিমাইজড না হওয়ার কারণে কেটে গিয়েছে।

কিন্তু কভার ফটো হওয়া উচিত এমন যেটা কোনো একটা মেসেজ বহন করবে আপনার পেইজ সম্পর্কে এবং কভার ফটো হবে সাইজ অপটিমাইজড যা মোবাইল এবং কম্পিউটার কোথাও এমনভাবে কেটে যাবেনা যেটা দেখতে খারাপ দেখায়।

আর ক্রেতা যেহেতু পেইজে ঢুকেই প্রথমে কভার ফটোটা দেখতে পায় তাই তার ইম্প্রেশন যেন নষ্ট নাহয় এজন্য প্রফেশনাল কভার ফটো ডিজাইন করে নিন, এক্ষেত্রে নিজে না পারলে প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিন এ ব্যাপারে।

Read More:সেরা 10 টি অনলাইনে ইনকাম করার উপায়

পেইজ ইনফো সেকশন ফিলআপঃ

পেইজ ইনফো সেকশনে ফেইসবুক মূলত আপনার পেইজ সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য নেয়, যেগুলো ফেইসবুক নরমাল ইউজারদের শো করে যারাই পেইজ করে তাদের সবাইকে। তো নিচে এবার আলোচনা করা হলো এই সেকশনে কোন কোন তথ্যগুলো দিতে হবে।

তবে এই সেকশনের তথ্যগুলো পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছুটা কী-ওয়ার্ড রিসার্চ করে করা উচিত, কারণ এখানে দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ফেইসবুক নরমাল ইউজারদের সাজেস্ট করে। তাই অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিয়ে পেইজ ইনফো সেকশনের নিচের ফিল্ডগুলো ফিলআপ করে নিন।

ক। ইউজার নেম
খ। পেইজ ক্যাটাগরি
গ। শর্ট ডেসক্রিপশন
ঘ। এডিশনাল ইনফর্মেশন
ঙ। প্রোডাক্টসঃ
চ। অন্যান্য তথ্যসমূহঃ উপরের তথ্যগুলো ছাড়াও পেইজ ইনফো সেকশনে আরো বেশ কিছু তথ্য যেমন ফোন নাম্বার, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, লোকেশন, প্রাইস রেঞ্জ এসব তথ্য দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

অ্যাপ্রোপ্রিয়াট ট্যামপ্লেট সিলেকশনঃ

ফেইসবুক বিভিন্ন ধরণের অর্গানাইজেশন বা বিজনেসের জন্য বিভিন্ন ধরণের পেইজ ট্যামপ্লেট ইউজ করার সুবিধা রেখেছে।

যেমন আপনি যদি ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট সেল করে থাকেন তাহলে আপনি শপিং ট্যমপ্লেট সিলেক্ট করে দিতে পারেন আবার আপনি সার্ভিস সেল করে থাকলে সার্ভিস ট্যামপ্লেট সিলেক্ট করে দিতে পারেন, তাই আপনি আপনার বিজনেসের সাথে রিলেটেড ট্যামপ্লেটটি সিলেক্ট করে দিন।

ট্যাব ডেকোরেশনঃ

আপনি যে ট্যামপ্লেটই সিলেক্ট করেননা কেন আপনি বেশ কিছু ট্যাব পাবেন, যেমনঃ শপ, ফটোজ, ভিডিওজ, লাইভ, রিভিউজ, এবাউট ইত্যাদি।

এগুলোর সিরিয়ালকে চাইলেই আগে পরে করা যায়, আপনি আপনার প্রয়জনমতো ট্যাবকে আগে দিয়ে দিন। যেমনঃ আপনি যদি কাস্টমারের রিভিউকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন এবং আগে শো করতে চান সেক্ষেত্রে এই ট্যাবটাকে আগে দিয়ে রাখুন।

শপ সেটআপঃ

ফেইসবুক পেইজের অন্যতম সুবিধাজনক একটি ফিচার হলো শপ। এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রোডাক্টগুলোকে ক্যাটাগরি অনুসারে সুবিন্যস্তভাবে ছবি, নাম, মূল্য এবং বর্ননাসহ ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন। এবং ক্রেতা চাইলেই এখান থেকে ক্লিক করে অর্ডার করতে পারবে।

তাই কমার্স ম্যানেজারের সাহায্যে আপনার পেইজের শপ সেটআপ করে নিন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিন কারণ এখানে সামান্য কিছুটা জটিলতা রয়েছে।

ম্যাসেজ সেটিংসঃ আপনার পেইজে আপনি চাইলে গ্রিটিংস মেসেজ এবং অটো রিপ্লাইয়ের জন্য আপনার ইচ্ছামতো মেসেজ সেট করে নিতে পারেন। যেটা আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার ক্রেতার প্রাথমিক রিপ্লাই প্রদান করবে।

কল টু একশন বাটনঃ আপনার পেইজে একটা কল টু একশন বাটন সেট করে দিন যেটাতে ক্লিক করেই যে কেউ আপনাকে মেসেজ অথবা কল করতে পারবে, তবে মেসেজের বাটন দেয়াটায় ক্রেতাদের জন্য বেশি সুবিধাজনক, কারণ অনেকেই হুট করে কল না দিয়ে মেসেজ করতেই পছন্দ করেন।

প্রফেশনাল পোস্ট কন্টেন্ট এবং ধারাবাহিকতাঃ আপনার বিজনেস পেইজ থেকে নিয়মিত প্রফেশনাল পোস্ট কন্টেন্ট আপলোড করুন, কারণ ক্রেতা যদি পেইজে ঢুকে দেখে দীর্ঘদিন আপনার কোনো পোস্ট নেই সেক্ষেত্রে আপনার প্রতি আস্থা নাও পেতে পারে তাই নিয়মিতই প্রফেশনাল কন্টেন্ট আপলোড করুন পেইজে।

উপরের নিয়ম গুলো মেনে পেইজ সেটআপ করলে আশাকরি পেইজের রিচ বাড়বে ও সেল বাড়বে ইনশাআল্লাহ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top