অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন : বর্তমান সময়ে, অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে ?

জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরণ করার নিয়ম এবং আবেদন ফি কত টাকা। সে বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে।

তাই আপনি যদি আপনার শিশুর জন্য বা অন্য কোন ব্যক্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন করতে চান? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম

কারণ অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম পূরণ করতে কি কি লাগবে। এবং নির্ভুল ভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ফরম পূরণ করার বিস্তারিত তথ্য এখানে প্রস্তুত করা হয়েছে।

আমরা জানি বর্তমান সময়ে হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন আর কোন কাজে ব্যবহৃত হবে না। তাই এখনো পর্যন্ত যাদের জন্ম নিবন্ধন হাতে লেখা রয়েছে তাদের অবশ্যই অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে হবে।

তাই আপনি যদি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম জানতে চান? তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন 2004 অনুযায়ী শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।

এক্ষেত্রে, অনেক পরিবারের লোকেরা শিশু’র জন্মের পরে 45 দিনের মধ্যে বিভিন্ন অসুবিধার জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ করতে পারেন না।

তাই আমি তাদের জন্য পরামর্শ দিব। শিশুর বয়স পাঁচ বছরের মধ্যে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন সনদ করিয়ে নিবেন।

অন্যথায় পাঁচ বছর বয়স পেরিয়ে গেলে জন্ম নিবন্ধন করতে, অনেক অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হবে এবং অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে।

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে কি কি লাগে ?

আপনি যদি নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র লাগবে, যে কাগজপত্র গুলো সংগ্রহ করে, আপনারা খুব সহজেই নিজে নিজে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনি যদি নিজে নিজে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করেন। তাহলে তথ্যগত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

তো চলুন জেনে নেয়া যাক। নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে কি কি লাগে?

শিশুর বয়স শূন্য থেকে 45 দিনের মধ্যে হলে যে, কাগজপত্র গুলো লাগবে।

সেগুলো হচ্ছে-

  • টিকার কার্ড
  • পিতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ (যদি থাকে)
  • মাতার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ (যদি থাকে)
  • পিতার জাতীয় পরিচয় পত্র
  • মাতা জাতীয় পরিচয় পত্র
  • বাসা হোল্ডিং নাম্বার এবং হালসানের হোল্ডিং টেক্সটের রশিদ
  • আবেদনকারী পিতা ও মাতা/ অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার

শিশুর বয়স 46 দিন থেকে পাঁচ বছর হলে প্রয়োজনীয় যে, কাগজপত্র গুলো লাগবে।

সেগুলো হচ্ছে-

  • স্টিকার কার্ড বা স্বাস্থ্যকর্মের প্রত্যয়ন পত্র
  • পিতার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি (যদি থাকে)
  • মাথার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি (যদি থাকে)
  • পিতার জাতীয় পরিচয় পত্র
  • মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র
  • বিশেষ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র
  • বাসা হোল্ডিং নাম্বার এবং হালসানের হোল্ডিং টেক্সটের রশিদ
  • আবেদনকারী পিতা ও মাতা/ অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার
  • জন্ম নিবন্ধন ফরম অনলাইন আবেদন ফরম জমা দেওয়ার সময় এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইটের ছবি

৫ বছর এর বেশি শিশু বা ব্যক্তিদের জন্য যে কাগজপত্র গুলো লাগবে।

সেগুলো হচ্ছে-

ব্যক্তির বয়সের জন্য চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র

  • সরকার কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এর কপি
  • পিতার জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি (যদি থাকে)
  • মাথার জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি (যদি থাকে)
  • পিতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
  • মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি ইত্যাদি

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম

বর্তমান সময়ে আমাদের মধ্যে অনেকে জানেন না জন্ম নিবন্ধন কোথায় আবেদন করতে হয়। তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আপনাকে ধাপে ধাপে জানিয়ে দেবো। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার মাধ্যম সম্পর্কে।

তো চলুন নতুন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন করার ধাপ গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

ধাপ- ১

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে bdris.gov.bd/br/application এই ঠিকানায় ভিজিট করুন।

আপনারা উপরে দেওয়া লিংকে প্রবেশ করলে, জন্ম নিবন্ধন এর একটি ফর্ম দেখতে পারবেন। সেখানে আপনি কোন ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন করতে চান, সেটি সিলেক্ট করে নেবেন।

তারপর আপনি যে ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে জন্ম নিবন্ধন করতে চান। সেটি নিবন্ধনাধীন শিশু বা ব্যক্তির কোন ঠিকানায় সেটি এখানে নির্বাচন করে, পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবেন।

তারপর উপরে দেওয়া ছবির মতো জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার একটি লম্বা ফ্রম দেখতে পারবেন। সেখানে আপনার নামের দুটি অংশ দেওয়া থাকলে প্রথম অংশ নামের প্রথম অংশের ঘরে লিখবেন এবং দ্বিতীয় অংশটি নামের দ্বিতীয় অংশ লিখবেন।

যদি নামের তৃতীয় অংশ থাকে তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয়টি একঘরে লিখবেন আর তৃতীয়টি দ্বিতীয় ঘরে লিখবেন।

এরকম ভাবে প্রথম অংশ এবং দ্বিতীয় অংশ বাংলাতে লেখার পর্যায়ক্রমে ইংরেজিতে লিখতে হবে।

ধাপ- ২

উপরে দেওয়া কাজ গুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনাকে জন্মস্থান, বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানার তথ্য যুক্ত করতে হবে।

আপনারা জন্ম স্থান, স্থায়ী ঠিকানার জন্য জন্মস্থান এবং স্থায়ী ঠিকানা একই হলে, চেকবক্সে টিক চিহ্ন দেবেন। আর বর্তমান ঠিকানার ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা একই হলে চেকবক্সে টিক দিয়ে দিবেন।

তারপর আপনার ঠিকানা পূরণ করার পর পরবর্তী বাটনে প্রবেশ করবেন।

ধাপ- ৩

বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করার পর। যে ব্যক্তি এ জন্ম নিবন্ধন আবেদন করছেন তার তথ্য প্রদান করতে হবে।

সাধারণত একটি শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য, পুরোপুরি ভাবে দায়ী থাকে পিতা এবং মাতা/ অভিভাবক। তাই শিশুর জন্ম নিবন্ধন আবেদন তারাই করে থাকেন।

এছাড়া আপনি যদি নিজে নিজের জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে পারেন তাহলে নিজের আবেদন করলে মিস সিলেক্ট করে দিবেন।

আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে আবেদনটির সম্পন্ন করবেন।

ধাপ- ৪

আপনারা উপরোক্ত নিজের নাম পূরণ করার পর নিবন্ধনাধীন শিশু বা ব্যক্তির পিতা এবং মাতার অনলাইন বা ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জাতীয়তা সিলেক্ট করতে হবে।

এক্ষেত্রে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর লেখার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাম চলে আসবে এগুলো আপনি এডিট করতে পারবেন না।

তার জন্য পিতা ও মাদার জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল বা অনলাইন কপি কিনা সেটি অবশ্যই যাচাই করে নিবেন।

পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনলাইনে না থাকলে শিশুর জন্ম নিবন্ধন, আগের সময়গুলোতে আবেদন করা যেত না্

কিন্তু বর্তমান সময়ে আপনারা পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ছাড়া খুব সহজেই জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে পারবেন।

পিতা ও মাতার পূরণ করার পরে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবেন।

ধাপ- ৫

আপনারা সফলভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন ফরম সাবমিট করলে জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করার অপশন পেয়ে যাবেন।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।

আবেদন পত্র প্রেম করার সময় নজর রাখবেন। প্রিন্ট যাতে পেজের উপরে এবং পেজের নিচের তথ্যগুলো দেখা যায়।

কারণ পেজের উপরের তথ্য গুলো আপনার আবেদনের অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেওয়া থাকবে।

এছাড়া অ্যাপ্লিকেশন আইডি আর কোন জায়গায় দেখা যায় না।

তাই অ্যাপ্লিকেশন আইডি ছাড়া আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদনটি খুঁজে বের করা সম্ভব হবে না। তার জন্য জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রিন্ট কপিতে যাতে অবশ্যই এপ্লিকেশন আইডি থাকে।

তারপর সেটি স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কপি জমা দিলে কিছুদিনের মধ্যে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন হাতে পেয়ে যাবেন।

শেষ কথাঃ

তো বন্ধুরা আপনারা যারা নতুন জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনে আবেদন করতে চান তারা উপরোক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে।

নিবন্ধনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করে যাবতীয় তথ্য পূরণ করে। আবেদন সাবমিট করতে পারবেন খুব সহজে।

আর আবেদন সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনাকে সরকারি ফি প্রদান করতে হবে। তারপর আবেদনের কপি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।

তারপর আপনারা খুব সহজেই অল্প দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।

তো আজকের লেখা আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top