গ্রাফিক্স কার্ড কি? গ্রাফিক্স কার্ড এর কাজ এবং কেনার আগে বিবেচিত বিষয়সমূহ

গ্রাফিক্স কার্ড কি? গ্রাফিক্স কার্ড এর কাজ এবং কেনার আগে বিবেচিত বিষয়সমূহঃ আপনি যদি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর অথবা গেমার হয়ে থাকেন তাহলে গ্রাফিক্স কার্ড শব্দটির সাথে পরিচিত হয়ে থাকবেন।

কারণ বর্তমান সময়ে অফিস আদালত থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রের যেকোনো পর্যায়ে অবস্থান করেও একজন মানুষ কম্পিউটার গেমস ও ভিডিও গেমস নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন।

আবার যারা ভিডিও ক্রিকেটর তাদের ক্ষেত্রেও এই গ্রাফিক্স কার্ড অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আজকের আর্টিকেলের আলোচনা পর্ব সম্পন্ন হবে গ্রাফিক্স কার্ড কি?

গ্রাফিক্স কার্ড এর কাজ কি এবং গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে কি কি জানা আবশ্যক? তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক।

গ্রাফিক্স কার্ড এর বিস্তারিত
গ্রাফিক্স কার্ড কি গ্রাফিক্স কার্ড এর আদোপান্তো

গ্রাফিক্স কার্ড কি?

গ্রাফিক্স কার্ড আসলে এমন একটি কম্পিউটার হার্ডওয়ার যেটাকে ডিসপ্লে কার্ড, ভিডিও কার্ড, ডিসপ্লে এডাপ্টার, জিপিইউ বা গ্রাফিক্স এডাপ্টার বলা হয়ে থাকে।

সহজ ভাবে বলতে গেলে গ্রাফিক্স কার্ড হচ্ছে কম্পিউটারের মধ্যে অবস্থানরত একটি ডিভাইস যার মাধ্যমে ডিসপ্লে তে ছবির স্বচ্ছতা, রঙ এবং সামগ্রিক গ্রাফিক্যাল তথ্য প্রদর্শন হয়।

আরেকটু ভিন্ন ভাবে বললে বলা যায়, একটি সিপিইউ এবং মনিটরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী কার্ড হচ্ছে গ্রাফিক্স কার্ড। এর সাহায্য ছাড়া কম্পিউটারের মনিটরে মনে করুন কিছুই আসবে না।

আর এটা শোনার পর যদি আপনি এমন প্রশ্ন করে থাকেন, আপনার কম্পিউটারে তো গ্রাফিক্স কার্ড নেই তাহলে আপনার কম্পিউটার কিভাবে চলছে? তাদের উদ্দেশ্যে বলছি।

গ্রাফিক্স কার্ড মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে এক্সটার্নাল গ্রাফিক্স কার্ড অপরটি হচ্ছে বিল্ট ইন গ্রাফিক্স কার্ড। বর্তমান বাজারে যে সকল মাদারবোর্ড রয়েছে সেগুলোতে বিল্ড ইন গ্রাফিক্স দেওয়া থাকে বলেই ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কোন প্রকার অতিরিক্ত গ্রাফিক্স কার্ড এর প্রয়োজন পড়ে না। 

গ্রাফিক্স কার্ড এর কাজ কি? গ্রাফিক্স কার্ড কেন প্রয়োজন বা গ্রাফিক্স কার্ড কেনই বা ব্যবহার করা হয়ে থাকে?

গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া মূলত কম্পিউটারের হাই রেগুলেশন এর ভিডিও, গেমস, ইমেজ ইত্যাদির কাজগুলো করা পসিবল হয় না। আর গ্রাফিক্স কার্ড যে কোন ভিডিও গেমস, ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি ছবির ক্ষেত্রে একটি গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টার কম্পিউটার মনিটরে সেই ছবি/ভিডিও হাই রেগুলেশন আউটপুট প্রস্তুত করে।

এক কথায়, গ্রাফিক্স কার্ড এর কাজ হচ্ছে কোন ভিডিও গেমস বা ভিডিও এডিটিং অথবা ছবি হাই রেজুলেশন পর্যায়ে নিয়ে আসা। আর এর ফলেই মূলত আমরা উক্ত কাজের জন্য যে কোন ভিডিও গেম, ছবি, ইমেজ হাই রেগুলেশনে অধিকতর স্পষ্ট রূপে দেখতে পাই এবং সহজভাবে নিজেদের কাজ সম্পাদন করতে পারি। 

আপনি যদি আপনার বাজারে কম বাজেটের ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের দিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন, এগুলোতে গ্রাফিক্স কার্ড এর পরিবর্তে সিপিইউ Ram এবং স্টোরেজের ওপর অধিক জোরদার দেওয়া হয়।

মূলত কম বাজেটের পিসির ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স কার্ড না থাকলেও আইজিপি বিল্ট ইন করা থাকে। শুধুমাত্র আইজিপি এর উপর নির্ভর করাটা অবশ্য ভুল কোন সিদ্ধান্ত নয়। 

তবে আপনি যদি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হন অথবা ডাই হার্ড গেমার হয়ে থাকেন তাহলে গ্রাফিক্স কার্ডের জরুরী তো পড়বেই। কারণ এই দুটি কাজ সম্পন্ন করতে গ্রাফিক্স কার্ড অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

মূলত কনজুমার মার্কেটে যত ধরনের হাই পারফরম্যান্স ভিডিও কার্ড আছে সেগুলো এই গ্রাফিক্স কার্ড এর আন্ডারে পড়ে। 

গ্রাফিক্স কার্ড কিভাবে কাজ করে?

আপনি যদি কম্পিউটারের সম্পর্কে বেসিক ধারণা পেয়ে থাকেন তাহলে আপনার কাছে গ্রাফিক্স কার্ড কম্পিউটারের প্রসেসিং করা খুব একটা জটিল মনে হবে না।

সত্যি বলতে গ্রাফিক্স কার্ড এর কার্যপদ্ধতি বোঝা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে যদি কম্পিউটার টেকনোলজিতে আপনার নূন্যতম জ্ঞান থেকে থাকে। তবে বোঝার সুবিধার্থে আপনাদের আমরা কিছু বিষয় সাজেস্ট করব। 

আর কিছু না হোক আপনি অন্তত এটা জানেন, কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটরের যে সকল ছবি, ইমেজ, ভিডিও দেখা যায় সেগুলো মনিটরের অবস্থিত হাজার হাজার পিকজেলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু নিয়ে গঠিত।

কি তাইতো? হ্যাঁ এটাই। সত্যি বলতে কম্পিউটারে ইমেজ তৈরির মূল ভিত্তি টাই হচ্ছে বিভিন্ন রঙের আলোর স্বয়ংক্রিয় ব্যবহার। কিন্তু বিষয় হচ্ছে কম্পিউটার কিভাবে রংয়ের ব্যবহার করে?

আমরা জানি যে কম্পিউটার শুধুমাত্র বাইনারি কোড অর্থাৎ ০,১ এর ভাষা বুঝতে পারে। আর মনিটরে ইমেজ তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হয় একটি ডিজিটাল কোড।

তাই এই কাজ করার জন্যই একটি গ্রাফিক্স কার্ড এর প্রয়োজন হয়। সিপিইউ এর কাজ হচ্ছে বাইনারি কোড কে ডিজিটাল করে এমএ আকারে রূপান্তরিত করা।

আর গ্রাফিক্স কার্ড সেই তথ্যগুলোর উপর ভিত্তি করে তার কাজ করার জন্য একটি ফ্রেম তৈরি করে আর পিক্সেল গুলোকে প্রয়োজনীয় আলো, টেক্সট, রং ইত্যাদি ব্যবহার করে কাজ করে।

পরবর্তীতে গ্রাফিক্স কার্ড রূপান্তরিত তথ্যকে একটি কেবল এর মাধ্যমে কম্পিউটারের মনিটরে প্রেরণ করে আর সেই ডাটা সমূহ আমরা কম্পিউটারের মনিটরে ইমেজ রূপে দেখতে পাই। এবার চলুন জেনে নেই গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে কি কি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন।

গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত?

বোঝার সুবিধার্থে এবং আপনি যাতে না ঠকতে চান তাই গ্রাফিক্স কার্ড কেনার পূর্বে অবশ্যই আমাদের সাজেস্ট করা এই বিষয়গুলো আপনি মাথায় রাখার চেষ্টা করবেন। সেগুলো হচ্ছে

  • মূল্য 
  • কম্পাবিলিটি
  • স্পেস এবং কুলিং
  • র‌্যাম
  • ব্যান্ড উইথ
  • মেমোরি
  • সেডার কোর
  • সিপিইউ

সেই সাথে আরো মনে রাখতে হবে–

  • মডেল নাম্বার
  • প্ল্যাটফর্মের কথা
  • কেইশিং
  • ট্রানজিস্টার সংখ্যা
  • ক্লক স্পিড
  • মেমোরি টাইপ
  • বাস স্পীড 
  • পি সি আই ভার্সন
  • ডিরেক্ট এক্স সাপোর্ট
  • ওপেন জি এল
  • অ্যান্টি অ্যালাইজিং
  • পাওয়ার ফ্যাকটর 
  • ম্যাক্স আউটপুট
  • রীফ্রেশ রেট
  • মাল্টি আউটপুট
  • মাল্টি জিপিইউ
  • এনার্জি সেভিং
  • এবং সফটওয়্যার সাপোর্ট এর বিষয় সমূহ সম্পর্কে।

আরও দেখুনঃ 

ব্যান্ডউইথ 

গ্রাফিক্স কার্ড এর আসল মজা দিয়ে থাকে ব্যান্ডউইথ। আপনি যদি ডিসিআর বেশি পেয়ে থাকেন তাহলে ব্যান্ডউইথও বেশি পাবেন। মানে কার্ডের ব্যান্ডউইথ যত বেশি হবে তত দ্রুত কোর গুলোতে ডেটা আদান-প্রদানের হার বৃদ্ধি পাবে।

আর স্বাভাবিকভাবে যত দ্রুত ডেটা সরবরাহ হবে আপনার গেম অথবা ভিডিও তত ভালো সেই সাথে স্মুথ ভাবে চলবে। মানে ব্যান্ডউইথ হচ্ছে জিপিইউ কত দ্রুত মেমোরির অ্যাক্সেস সংগ্রহ করতে পারে।

গ্রাফিক্স কার্ড দুটো সেটার কোড গুলোতে যেটা সরবরাহ করতে পারে আর তাই এর ফলে গেম এবং ভিডিও স্পষ্ট ও স্মুত ভাবে চলে। কিন্তু এক্ষেত্রে গ্রাফিক্স কার্ড এর ব্যান্ডউইথ বুঝতে হলে দুটি বিষয় মাথায় রাখবেন। সেগুলো হচ্ছে–

  • ক্লক স্পিড
  • বাস উইডথ

মেমোরি

গ্রাফিক্স কার্ডের মেমরি কোন স্টোরেজ নয় এটা মূলত একটি RAM. কিন্তু হ্যাঁ গ্রাফিক্স কার্ড এর ক্ষেত্রে মেমোরির পরিমাণ কত তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যান্ডউইথ। তাই মেমোরির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া উচিত ব্যান্ড উইথ এর ওপর। 

সেডার কোর

ব্যান্ড উইথ এর ওপর সেডার কোরের অনেক প্রভাব রয়েছে। আর তাছাড়াও সেডার কোর এর মূল কাজ হচ্ছে ইমেজ রেন্ডারিং করা। তাই আপনার কোর্ড এ সেডার কোড যত বেশি হবে ইমেজ প্রসেসিং ক্ষমতা তত বৃদ্ধি পাবে।

পরিশেষে: ইতোমধ্যে আমাদের আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন। একটা বিষয় চিন্তা করে দেখুন সবদিক বিবেচনা করে ভালো দাম দিয়ে কোন ভাল কোম্পানির গ্রাফিক্স কার্ড যদি আপনি কেনেন তাহলে কোন দিক দিয়েই অন্তত ঠকবেন না। কিন্তু আমরা মূলত বেশ ভুল কাজ করে ফেলি সচরাচর কম দামে ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ড খুঁজি।

আর এজন্যই বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তাই গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে জেনে এবং আমাদের সাজেস্ট করা বিষয়গুলো মাথায় রেখে এই কার্ড কিনার চেষ্টা করবেন। আশা করি ভালো মানের এবং উন্নত গ্রাফিক্স কার্ড পেয়ে যাবেন আপনারা। তো ভিউয়ার্স আজকের আলোচনা পর্ব এ পর্যন্তই,। সবাই ভাল থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top