বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ?

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আশা করি ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সামনে একটি নতুন আর্টিকেল নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আমি আপনাদেরকে বিটকয়েন সম্পর্কে বেসিক ধারণা দিব।

আপনারা কি বিটকয়েন এ কাজ করতে চান,কিন্তু জানেননা বিটকয়েন কি? বিটকয়েন ইনকাম করতে চান, কিন্তু জানেননা বিটকয়েন কিভাবে ইনভেস্ট করতে হয়? বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি জিনিসটা আসলে কি? সবাই হয়তো বা বিটকয়েনের নাম আগেও শুনেছেন। কিন্তু জানেননা বিটকয়েন কি। হয়তোবা শুনেছেন যে বিটকয়েন থেকে অনেক টাকা ইনকাম করা সম্ভব। এমন চিন্তা হয়তোবা আপনার মনে এসেছে যে আমিও বিটকয়েন থেকে ইনকাম করবো। কিন্তু পারছেন না। তাহলে আমি আজকের আর্টিকেলে বলবো

বিটকয়েন আসলে কি? 

বিটকয়েন হল সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। বর্তমানে 1 বিট কয়েনের মূল্য বাংলাদেশি আরে 44 লাখ টাকারও বেশি। এটি এক ধরনের বিকেন্দ্রিক ডিজিটাল মুদ্রা। যেকোনো ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন রেখে বিটকয়েনে লেনদেন করতে পারে।বিটকয়েনের মূলমন্ত্র হলো, সামান্য কিছু লোক মুদ্রাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে মুদ্রা ব্যবস্থায় কারো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভালো।

 বিটকয়েন কে ভালোভাবে জানতে হলে বর্তমান বিশ্বের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির অসুবিধা বুঝতে হবে। আমরা নিরাপদে অর্থ রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে বিশ্বাস করে আমাদের কষ্টার্জিত টাকা জমা রাখি। কিন্তু কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের টাকা নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলে। 2008 সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা।

 তার অন্যতম উদাহরণ আমেরিকার জনগণের গচ্ছিত টাকা। ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়ে কতিপয় ব্যবসায়ী অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে ব্যবসায় লোকসান করে। স্বাভাবিকভাবেই তারা ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারেনি, ফলে বিশ্ব জুড়ে তৈরি হয় এক ভয়াবহ মন্দা। সেই মন্দার জন্য শুধু ব্যাংক ঋণ গ্রহীতা ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়, আমেরিকান সরকারের ভুল পলিসি এবং অব্যবস্থাপনা ও এর অন্যতম কারণ‌।যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতি এক সুতায় গাঁথা, তাই আমেরিকার মন্দা অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না। 

সেই অর্থনৈতিক মন্দায় বহু প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। তখন আমেরিকার জনগণ বড় বড় ব্যাংক এবং সরকারের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, কারণ বহু পুরনো কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত অর্থ ব্যবস্থার কারণেই ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে এক নতুন ধরনের মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে যার নাম ক্রিপ্টোকারেন্সি। আর এই ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রথম পরীক্ষামূলক মজা হলো বিটকয়েন।

 সকল ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং সরকারি হস্তক্ষেপ এড়িয়ে স্বাধীন অর্থব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিটকয়েনের জন্ম হয়েছিল। এই অর্থ গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ব্যক্তির কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিটকয়েন নিয়ন্ত্রিত হয়। 2008 সালের 18 আগস্ট bitcoin.org ওয়েবসাইটটি নিবন্ধিত হয়েছিল। 

সে বছর নভেম্বরে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে একজন বিটকয়েন কি এবং কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কিত একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন। 2009 সালে সাতোশি নাকামোতো আলফি নামের এক ব্যক্তিকে 10 বিটকয়েন প্রদানের মাধ্যমে বিটকয়েন লেনদেনের সূচনা করেন। বিটকয়েন হলো peer-to-peer ব্যবস্থা, অর্থাৎ প্রেরক এবং প্রাপক এর কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মধ্যে সরাসরি বিক্রয়ের লেনদেন সম্পন্ন হয়। তাই এখানে কোন প্রতিষ্ঠান দরকার পড়ে না। লেনদেনকারী ব্যক্তি বেতিতো তৃতীয় কারো পক্ষে এই ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

বিট কয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি তে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে ক্রিপ্টোগ্রাফি। ক্রিপ্টোগ্রাফি দ্বারা লেনদেনের সত্যতা যাচাই করা হয় রাকিব ব্লক চেইন এর মাধ্যমে। ব্লকচেইন হলো এক ধরনের উন্মুক্ত হিসেবের খাতা। যে কোন ব্যক্তি চাইলেই দুর্নীতিবাজ ব্যাংকারের মত হিসেবে গরমিল করতে পারবেনা। নতুন বিটকয়েন উৎপাদন করার জন্য অত্যন্ত জটিল কমপিউটিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যাকে বলা হয় মাইনিং।

 কয়েক বছর আগেও সাধারণ বাসাবাড়ির কম্পিউটারেই মারা যেত। কিন্তু বর্তমানে বিটকয়েন মাইনিং করে লাভজনক অবস্থায় পৌঁছাতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ছোটখাটো ডেটা সেন্টার গড়ে তুলতে হয়। তারপরও এই বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হবার শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। 

বিটকয়েন চাইলেই ইচ্ছামত উৎপাদন করা যাবেনা বিটকয়েনের সংখ্যা কখনোই 2 কোটি 10 লাখের বেশি হতে পারবে না। প্রতিটি বিটকয়েন 10 কটি ভাগে বিভক্ত। এগুলোকে বলা হয় 8741 সালের পর নতুন করে আর কোন বিটকয়েন উৎপাদন করা যাবেনা। স্বর্ণের ওপর মানুষের আস্থা থাকার কারণে স্বর্ণের দাম যেমন বেড়ে যায় ঠিক একইভাবে বিটকয়েন এর উপর মানুষের ক্রমবর্ধমান আস্থায়ী একে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। 

2013 সালের পর থেকে বিটকয়েনের দাম দিন দিন বাড়তেই থাকে। লোকজন বিটকয়েন কে স্টক মার্কেট এর মত ব্যবহার করতে শুরু করে। তখন অল্প দামে বিটকয়েন কিনে বেশি দামে বিক্রি করার হিড়িক পড়ে যায়। গত কয়েক বছরে বিটকয়েন ধারণার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে।

 বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক লেনদেন এবং প্রতারণার কারণে 2018 সালের জানুয়ারিতে বিট কয়েনের মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এরপর থেকেই অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি আসল মূল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।যদিও এখন বিটকয়েনের বাজার আগের তুলনায় অনেকটা স্থিতিশীল। মাইক্রোসফ্ট,অ্যামাজনড় পে পাল ,স্টারবাকস ,এর মত বেশ কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিট কয়েনের কেনাবেচা সমর্থন করে।

 বিটকয়েনের চালিকাশক্তি ব্লকচেইন রক্ষণাবেক্ষণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ব্লকচেইন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে এত বিপুল পরিমাণ জ্বালানি খরচ হয় যা অনেক দেশের ব্যবহৃত জ্বালানি চেয়েও বেশি। বিটকয়েন তৈরি করতে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পর যে পরিমাণ চাপ পড়ছে, বিশেষজ্ঞরা তাতে বেশ শঙ্কিত। বর্তমানে বিটকয়েনের লেনদেন প্রক্রিয়া ও খুব ধীরগতিতে পরিচালিত হয়।জনপ্রিয় পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ভিসা প্রতি সেকেন্ডে 24000 লেনদেন প্রক্রিয়াজাত করে। অন্যদিকে বিটকয়েন প্রতি সেকেন্ডে মাত্র সাতটি লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। 

যে কোন মুদ্রার প্রধানত দুটি দিক থাকে। কার্যকর বিনিময় যোগ্যতা এবং মুদ্রানের স্থিতিশীলতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিটকয়েনের এ দুটোর কোনোটাই নেই।আর একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো বিটকয়েন লেনদেনকারী সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায় না অর্থাৎ পরিচয় গোপন করে লেনদেন করা হয় সে কারণে একটা সময় বিটকয়েন ব্যবহার করে মানুষ নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিল।

 শিরোনামের এ কি ডার্ক ওয়েব সাইটে বিটকয়েনের বিনিময় হেরোইন, কোকেন, এলএসডি মতো ভয়াবহ মাদক অবাধে বিক্রি হতে থাকে। এছাড়া কালোবাজারি এবং অর্থ পাচারের বিটকয়েন ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইনে অনেক বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ রয়েছে।সেখানে যেকোনো মুদ্রাকে বিটকয়েনে এবং বিটকয়েন কে অন্য কোন মুদ্রায় রূপান্তর করা যায়।কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারি অনুমোদন ছাড়া সকল অর্থই অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

 ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন অনেক দেশেই নিষিদ্ধ । 2018 সালে মিশরের গ্র্যান্ড মুফতির ফতোয়া দিয়েছিলেন বিটকয়েনে লেনদেন ইসলাম সমর্থিত নয়। 2017 সালে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েন সহ সকল ক্রিপটোকারেন্সি লেনদেন নিষিদ্ধ করে। 2021 সালে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় ক্রিপ্টোকারেন্সি মালিকানার সংরক্ষণ এবং লেনদেন শিক্ষিত না হলেও এটি কোন অপরাধ নয়।

অতি সম্প্রতি এল সালভাদর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বিটকয়েন কে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।বিটকয়েন হোক বা বস্তুগত ঐশ্বর্য মূল্যবান সম্পদ এর নজরদারি করা অত্যন্ত জরুরী। খুবই সহজে বেশ কয়েক ধরনের জিপিএস ট্র্যাকার রয়েছে যার সাহায্যে real-time ট্রাকিং এবং রিয়েল টাইম এলার্ট জানতে পারবেন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে জিপিএস ট্র্যাকার ছাড়াও উচ্চগতির ইন্টারনেট সহ ইনফোলিংক লিমিটেড আরও বেশ কিছু সেবা প্রদান করে বিস্তারিত জানতে চাইলে আর্টিকেল এর শেষ এ দেওয়া লিঙ্ক থেকে তাদের ওয়েবসাইট দেখুন। ব্যাক জানায় ক্রিপ্টোকারেন্সি মালিকানার সংরক্ষণ এবং লেনদেন শিক্ষিত না হলেও এটি কোন অপরাধ নয়। 

আমার আজকের আর্টিকেল এ পর্যন্তই। বিটকয়েন সম্পর্কে যদি সামান্য কিছু ধারণা পেয়ে থাকেন তাহলে লাইক করবেন এবং বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন। ভালো থাকবেন। খোদা হাফেজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top