মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও ক্ষতি

আমরা আজকের যে সময়টাতে দাঁড়িয়ে আছি এই মোবাইল ছাড়া আমাদের জীবনটা কল্পনা করাও অসম্ভব প্রায় মোবাইল ফোন তৈরি করা হয়েছে মানুষের উপকারের জন্য মানুষ যাতে তাঁর নিজ জায়গায় থেকে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিছু শিখতে পারে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের কাছে এখন মোবাইল ফোন আছে।

আমরা এখন আমাদের হাতের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৃথিবীর সব জায়গায় খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারছি। আমরা আমাদের সুন্দর মুহুর্ত গুলো মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বন্ধু- বান্ধব, কাছের মানুষ বা পৃথিবীর সবার সাথে শেয়ার করতে পারছি। মোবাইল ফোন দিয়ে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারছি খুব সহজেই।মোবাইল ফোন দিয়ে এখন অনলাইনে শপিং করা যায়, পড়াশোনা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়,গান শোনা যায়, ভিডিও দেখা যায়, ভিডিও কলে দূরের মানুষের সাথে কথা বলা যায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গার আবহাওয়ার তথ্য আবার এছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খবর জানাও সম্ভব।

ব্যবসা করা যায় আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা ঘরে বসে টাকা আয় করতে সক্ষম হচ্ছি। মোবাইল ফোন দিয়ে ঘরে বসে ট্রেন,প্লেনের টিকিট কাটতে পারছি খুব সহজেই। এখন আমরা প্রায় পৃথিবীর সব কাজ মোবাইল ফোনের দ্বারা করতে সক্ষম হই।

মোবাইল ফোন যেমন আমাদের অনেক উপকার  করে।তেমনি মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। মোবাইল ফোন আমাদের উপকারের জন্যই আবিষ্কার করা হয়েছে কিন্তু আমরা মোবাইল ফোনের প্রতি এতো আসক্ত হয়ে পরেছি যে মোবাইল ফোন এখন আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ফোনে আসক্তি এখন পৃথিবীতে একটি বড় আকার ধারণ করেছে।

মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের দ্বারা যে আমাদের ক্ষতি হয় সেটা আমরা কমবেশি সবাই জানি কিন্তু আমরা সচেতন হতে চাইনা। মোবাইল ফোন অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি ছাড়া ও মানসিক শারীরিক ক্ষতি তো হবেই। আমরা আমাদের বেশিরভাগ সময়টাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কাটিয়ে দেই। এতে আমাদের সময়ের অপচয় হয় তাছাড়াও আমরা স্বাস্থ্য শারীরিক মানসিক সমস্যায় ভুগি। মোবাইল ফোন ব্যবহারে আমাদের যে ক্ষতিগুলো হয় সেই ক্ষতিকর দিক গুলো হলো-

মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও ক্ষতি:

১) অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতিগুলো হয় –

গবেষকরা এ বিষয়টি গবেষণা করেছে। তাদের মতে এই বিষয়টি হচ্ছে ‘এপিজেনেটিক্স’ সম্পর্কিত বিষয়। অনেক সময় ধরে চোখের খুব কাছে রেখে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে মানুষের দৃষ্টিশক্তিহীন হওয়ার জিনগত সমস্যা দেখা দেয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার করলে দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে। মার্কিন ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন অ্যাসোসিয়েশন বলেন, মোবাইল ফোনের নীলাভ আলো চোখের রেটিনার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মাধ্যমে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

মোবাইল ফোন স্ক্রীন এর ফ্রন্ট সাইজ বড় করে হাতে থাকা মোবাইল ফোন চোখ থেকে ১৬ ইঞ্চি দূরে হবে। আর কিছু সময় পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য মোবাইল ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সবুজ গাছপালার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে আর সব সময় মোবাইলের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখতে হবে। এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে চোখের ঝুঁকি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

২) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কানে সমস্যা-

মোবাইলে বেশিক্ষণ কথা বলে,উচ্চ আওয়াজে গান শুনলে এবং কানে হেডফোন দীর্ঘক্ষণ লাগিয়ে গান শুনলে শ্রবণ শক্তি কমে যেতে পারে। প্রত্যেকদিন দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করলে তারা তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আংশিক বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বেশি সাউন্ড দিয়ে গান শোনা যাবেনা,হেডফোন কানে বেশিক্ষণ লাগিয়ে রাখা যাবে না,আর বেশি প্রয়োজন ছাড়া বেশি সময় ধরে মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে না এগুলো যদি আমরা মেনে চলি তাহলে মোবাইল ফোনের কারণে কানের যে ক্ষতিগুলো হয় তার ঝুঁকি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

৩) ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে ঘাড়ে ব্যথা-

অনেক সময় ধরে মাথা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে মোবাইল চালালে ঘাড়ে ব্যথার মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত গেমসে আসক্তি,মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে ভিডিও দেখলে বা সোশ্যাল মিডিয়া নিউজ ফিড দেখতে দেখতে মনোযোগ দিতে গিয়ে অনেক সময় আমাদের শরীরের পজিশন ঠিক থাকে না। মোবাইল থেকে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখি না সেদিকে আমাদের খেয়াল থাকেনা। মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি নিচে মোবাইলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। তাই মোবাইল থেকে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারলে এই ঘাড়ে ব্যথা কিছুটা রোধ করা সম্ভব।

৪) মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারে আমাদের

 অস্থি সন্ধি গুলোর যে ক্ষতি হয়-

২০১৬ সালের ১৬ ই জুন ডিস্কাউট ব্লগের এক প্রতিবেদন এ দেখা গেছে যে, গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছে যে একজন সাধারন মানুষ যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তার স্ক্রিনে ট্যাপ, ক্লিক ও সোয়াইপের পরিমাণ গড়ে

২ হাজার ৬ শত ১৭ বার   এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪ শত ২৭ বার। বেশিক্ষণ মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে টাইপিং এর কারণে আমাদের হাতের আঙ্গুলের জয়েন্টে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এটার কারণে আর্থারাইটিসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এছাড়াও আমরা যেভাবে বসি, কাঁধ ও কানের মাঝখানে রেখে ফোনে কথা বলি আর অতিরিক্ত মোবাইলের দিকে ঝুঁকে বেশিক্ষণ মেসেজ টাইপিং করি এসব কারণে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এইসব ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে মেসেজ টাইপ না করা আর সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে মোবাইল ফোন সঠিকভাবে চালানোর নির্দেশনা অনুযায়ী মোবাইল ফোন চালানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এই আলোচনার থেকে বোঝা যায় আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করবো কিন্তু তা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নয়।মোবাইল ফোন যেমন আমাদের উপকার করে তেমনি ক্ষতি ও করে।আমরা এদিকে খেয়াল রাখব যে আমাদের এই মোবাইল ফোন ব্যবহার যেন আমাদের ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top